৪ দলীয় জোটের জনসভা আজ

খোন্দকার কাওছার হোসেন : বিএনপিÑজামাত নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর উদ্যোগে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আজ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক জামাতে ইসলামী, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের প্রধানরাও বক্তব্য দেবেন। বিএনপি সমমনা ও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ভাষণ দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকার বিরোধী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতেই এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এ জনসভা থেকেই খালেদা জিয়া ১টি হরতাল, ৬ বিভাগে লংমার্চ, রোডমার্চ ও জনসভা এবং অবরোধ কর্মসূচিসহ সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক মাসব্যাপী লাগাতার ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ঘোষিত এ কর্মসূচি জোট ও সমমনা দলগুলো যুগপতভাবে পালন করবে।

সূত্রের দাবি, সরকারকে সহযোগীতা করার জন্য খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময়ে প্রস্তাব রেখেছেন। কিন্তু সরকার তার প্রস্তাব আমলে না নিয়ে বরং বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহতভাবে স্টীম রোলার চালিয়েছে। তারপরও তিনি ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছেন। কিন্তু সরকার কিছুতেই নমনীয় হচ্ছেনা। সরকারের অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি দেশ পরিচালনায়ও তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধণীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে আর সময় দেয়া ঠিক নয় বলে দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়াকে সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো কর্মসূচি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শেই এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে।

জনসভা সফল করতে গত কয়েক দিন যাবত নিজ দল, চারদল ও সমমনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। গতকাল সোমবার রাত আটটায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি শেষ মুহূর্তে জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন, জনসভায় তার সম্ভাব্য বক্তব্য কি তা উপস্থাপন করা হয়েছে, একই সঙ্গে সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

এর আগে গত শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর ও পাশ্ববর্তী জেলাসমুহ থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী নেতা ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করছেন। এসব সভায় আজকের জনসভা সফল করার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা এ জনসভা সফল করতে ভুমিকা রাখবেনা সেসব নেতাদের দলীয় পদ কেড়ে নেয়া হবে বলেও তিনি আগাম হুসিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।

৪ দলীয় জোটের প্রথম জনসভা
২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বর্তমান সরকারের আমলে চারদলীয় জোটের উদ্যোগে এটিই হবে প্রথম জনসভা। এ জনসভা থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। বিএনপি শুরুতে পল্টন ময়দানে এ জনসভা করার ঘোষণা দিলেও সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় এ জনসভা করবে দলটি।

জনসভার স্থান, সময় ও পরিধি
নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভিআইপি রোডে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উত্তর মুখ করে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। বাশ ও কাঠের এ মঞ্চে তৈরির কাজ চলছে বলে গতকাল সরেজমিনে ঐ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে।

দুপুর আড়াইটায় সভার কাজ শুরু হবে। সভার পরিধি ধরা হয়েছে পূর্বে নটরডেম কলেজ, পশ্চিমে কাকরাইল মসজিদ, উত্তরে মালিবাগ ও দক্ষিনে পুরানা পল্টন মোড়।

প্রচার ব্যবস্থা
জনসভার বক্তব্য যাতে কারো দেখতে বা শুনতে অসুবিধা না হয় এজন্য সভাস্থলের বিভিন্ন পয়েন্টে বড় সাইজের কয়েকটি স্কীন লাগানো হবে। এর বাইরে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশণ চ্যানেলকে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারে। গতকাল দুপুরে ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সব বেসরকারী টিভি চ্যনেলকে এ জনসভা সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কয়েকটি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যোগাযোগ করছে। তিনি বলেন, সরাসরি সম্প্রচার হলে সভাস্থলে না আসা লোকজন এমনকি গ্রামের মানুষ ঘরে বসে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে পারবেন।

জনসভা সরাসরি ইন্টারনেটে
জনসভা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি দেখাবে বিএনপি।www.bnplive.com এই ঠিকানায় দুপুর আড়াইটা থেকে জনসভাটি দেখা যাবে।

জনসভার মাইকিংয়ে বাধা
জনসভার মাইকিং করার অনুমতিও সরকার দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পল্টন ময়দানে জনসভার অনুমতি দেয়নি। এখন আমরা নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবো। সেই সমাবেশের প্রচারণায় মাইকিং করতে অনুমতি চেয়েছি। তাও দেয়া হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বিএনপিকে মাইকিং করার অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ মিরপুর গোল চত্বরে যুবলীগের জনসভার জন্য শনিবার দিনভর মাইকিং হয়েছে। এক দেশে দুই নীতি চলছে। এভাবে গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকার। নগরবাসীকে এই জনসভা সফল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাপক জনসমাগম করে এ সরকারকে দেখিয়ে দিতে হবে- তোমাদের ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে হবে।

হরতাল সফলে লিফলেট ও পোস্টার
প্রচার কাজে বাধা দিচ্ছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালালেও রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে বিএনপির পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দলের  কেন্দ্রীয় নেতারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে লিফলেট বিতরণ করেছেন। গতকাল সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় লিফলেট বিতরণ কালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চায়। সমাবেশে বাধা দেয়া হলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বিএনপি বাধ্য হবে বলেও তিনি সরকারকে হুসিয়ারী উচ্চারণ করেন।

ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও লোক আসবে
জনসভা সফল করতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে ব্যাপকহারে লোক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা একযোগে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরেও ঢাকা জেলা ও ঢাকার আশপাশের জেলা গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, নরশিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ থেকে লোক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও লোক আসবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জামাতের এক লাখ লোক উপস্থিত থাকবে
এক লাখ লোকের উপস্থিতির টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে জামাত। এ লক্ষ্যে তারা থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জামাতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বড় শক্তি হিসেবে মাঠে দেখা যাবে। জামাতের ঢাকা মহানগরী প্রচার সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য জানা যায়।

সমাবেশ স্থলে স্টেজের আশপাশে জামাত-শিবিরের সমর্থকদের আগে থেকেই আসতে দলের নির্দেশনা রয়েছে। এ সমাবেশের মাধ্যমে জামাত রাজপথে তাদের শক্তি প্রদর্শন করবে।

স্থায়ী কমিটির সভা ও কর্মসূচি নির্ধারণ
সমাবেশে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে গতকাল সোমবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে রাত আটটায় স্থায়ী কমিটি বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

কি কর্মসূচি আসছে
আগামী অক্টোবর মাসের ১৩ অথবা ১৬ তারিখে ১২ঘন্টার ১টি হরতালসহ আগামী তিন মাসের মধ্যে কয়েকটি হরতাল, বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ, লংমার্চ, অবরোধ, খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের সারাদেশ সফরসহ লাগাতার ধারাবাহিক কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

যোগ দিতে ২১ সংগঠনের আহ্বান
জনসভা যোগ দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ২১টি সংগঠন। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ২১ সংগঠনের নেতারা জনসভা সফল করার এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, জিয়া সেনা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান তপন, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের চেয়ারম্যান মওলানা শেখ মিজানুর রহমান, মহাসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন কাজী, বাংলাদেশ সচেতন যুব সমাজের উপদেষ্টা সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, নাগরিক অধিকার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তৃনমূল দলের সভাপতি মো. হানিফ বেপারী, জাতীয়তাবাদী বাস্তহারা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান টিপু মাস্টার, দেশনেত্রী সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, জিয়া আদর্শ একাডেমীর মহাসচিব এম.এ রশিদ, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার, জিয়া স্মৃতি সংসদের সভাপতি আবদুল মান্নান জমাদ্দার, সুশিল ফোরামের সভাপতি মো. জাহিদ হোসেন, জাগ্রত জনতা ফোরামের সভাপতি সহিদ চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন শাহিন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ব্যাপারী, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের সভাপতি এম এ হান্নান ও জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম।