কিংবদন্তী দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর!

আহমেদ জালাল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ কিংবদন্তী দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। যার দর্শন নিয়ে দেশ বিদেশের অনেক প্রগতিশীল কিংবা মুক্ত মনের মেধাবীরা Aroj Aliষনা করছেন। চর্চা করে চলছেন তার বিখ্যাত দর্শন “সত্যের সন্ধানে”। বিখ্যাত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের দর্শন চর্চায় অংশ গ্রহনকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশের রাজধানী ঢাকা,নারায়নগঞ্জ,বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে আরজ চর্চা কেন্দ্র। রূপ নিচ্ছে আরজ স্মৃতি সংসদে। এবারে পালিত হচ্ছে এই মহান দার্শনিকের ১১১ তম জন্ম জয়ন্তী।

মানবতা রক্ষা করা করাই যেন তার মূখ্য দর্শন। মানব ধর্মী জীবন দর্শন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আরজ আলী বিশ্বের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। প্রতিবাদী কন্ঠে তিনি ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে প্রগতির পথে ধাবিত করার একজন সংগ্রামী মানুষ। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন মানবতার চেয়ে পৃথিবীতে বড় কোন ধর্ম নেই। পৃথিবীতে যত হানাহানি সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রক্তের হোলিখেলা বা ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে তার বেশির ভাগই হয়েছে প্রচলিত ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে। ধর্মের জুজু! যা এখনও অব্যাহত। প্রগতিশীল দর্শনের প্রধান বিষয় ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত। আর মানবতার দর্শনে অগ্রসর হওয়াটা সঠিক পথ বলে ধারন করেন প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার অধিকারীরা।

বাংলার খ্যাতনামা দার্শনিক আরজ আলী মাতুবরের ১১১তম জন্ম জয়ন্তী পালন পালন করে বরিশালের মুক্ত চিন্তার মানুষরা। এজন্য আরজ আলী মাতুব্বর স্মৃতি সংসদ এর উদ্যোগে বরিশাল অশ্বনী কুমার হলে সন্ধ্যা এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে প্রগতিশীল মনা ব্যক্তি বর্গ অংশ গ্রহন করেন।

আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০-১৯৮৫ ইং, ১৩০৭-১৩৯২ বাংলা) স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখক। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তার প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।

বরিশাল নগরী থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত লামচরি নামক গ্রামে বাংলা ১৩০৭ সনের ৭ই পৌষ এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আরজ আলী মাতুব্বর জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। আরজ আলী মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারান। এর পরে তাদের পরিবারটি দেনার দায়ে বসতবাটি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মক্তব্যে সীতানাথ বসাকের কাছে 'আদর্শলিপি' পড়তেন। দারিদ্র্যতার কারনে তাঁকে মক্তব ছাডতে হয়। এরপর তিনি কৃষিকাজে নিয়োজিত হন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপডা শিখতে থাকেন। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহন করেন। এক সময় মানুষ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলে তিনি এই বিষয়ে পডাশোনা শুরু করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজস্ব ধরনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। তাঁর বেশ কিছু বই প্রকাশিত হলে সুধী সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি পান। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে নিজের বাড়িতে 'আরজ মঞ্জিল' পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করেন। মানবকল্যানে ব্যবহারের জন্য বরিশাল মেডিকেল কলেজকে মরণোত্তর দেহদান করেন। ১৩৯২ সনের ১লা চৈত্র তারিখে ৮৬ বছর বয়সে ৭ কন্যা ও ৩ পুত্রে জনক এই প্রগতিবাদ ব্যক্তিত্ব বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থঃ-ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০),সত্যের সন্ধান (১৯৭৩),সৃষ্টি-রহস্য (১৯৭৮),স্মরণিকা (১৯৮২) অনুমান (১৯৮৩), মুক্তমন (১৯৮৮)

তাঁর প্রাপ্ত সম্মাননা- বাংলা একাডেমী কর্তৃক আজীবন সদস্য পদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন। হুমায়ুনন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৩৮৫ ব.) উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা (১৩৯২ ব.)।