অন্বেষা -১ নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী


“আপু, তুই পারিসও”। শৈলী হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। রাত আড়াইটা বাজে। অন্বেষা ওর বোন শৈলীকে সাথে নিয়ে একটা “ফেইক নিক” ব্যবহার করে আই.আর.সি’র বাংলাদেশ রুমে চ্যাট করছিল। আজ অন্বেষার নিক “মিথিলা”। আঠাশ বছরের গৃহবধু। স্বামী বিদেশে থাকে। একাকী রাত কাটাচ্ছে। ঘুম আসছে না! এ ধরণের কথা বার্তা শুনলে ছেলেদের মাথা এমনিতেই খারাপ হয়, তার উপর যদি “লবি”তে বসে এমন চ্যাট করে কেউ, তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রাইভেট ম্যাসেজ এসে স্ক্রিন ভরে যায়। অন্বেষা তখন খুব ভাবের সাথে লবিতে ঘোষণা করে, “আমাকে কেউ প্রাইভেট ম্যাসেজ পাঠাবেন না”। এটা কিন্তু ছেলেদের উস্কে দেয়ার অন্যতম হাতিয়ার অন্বেষার। এতে ছেলেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং প্রাইভেট ম্যাসেজ পাঠিয়েই জিজ্ঞেস করে “কেন প্রাইভেট ম্যাসেজ পাঠাবো না”! তারপর দুই বোন মিলে তাদের এক সাথে পচাতে শুরু করে।

আজ “ঢাকাইয়া মাস্তান” নামের একটা নিককে লবিতে পচাতে শুরু করলো দুই বোন। আধ ঘণ্টা চ্যাট করার পর যখন ছেলেটা বুঝতে পারলো আসলে তাকে পচানো হচ্ছে, তখন সে “ম”, “খ” ইত্যাদি অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া গালি দেয়া শুরু করলো। এবার মিথিলা নামের অন্বেষা যেন কী প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছে এভাবে লিখে, “মডারেটর ভাইয়ারা, দেখেন আমাকে বাজে কথা বলছে”। বোনের সম্ভ্রমে আঘাত! বাংলাদেশ রুমের মডারেটরদের রক্তে ঝড় উঠে। তারা তেড়ে আসে মিথিলার ডাকে। একটু পর লেখা উঠে, “ঢাকাইয়া মাস্তান হ্যাজ বিন কিকড্ ফ্রম দ্যা চ্যানেল বাই কুয়াশা”। তারপর কুয়াশার থেকে একটা প্রাইভেট ম্যাসেজ আসে, “আর কেউ বিরক্ত করলে আমাকে জানাবেন। আমরা রাত জেগে থাকি আপনাদের নিরাপদ চ্যাটের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্যে”। ভাব খানা এমন যেন কাজী আনোয়ার হোসেনের কুয়াশা এখন চ্যাট রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে!

আরেকটা ছেলেকে যখন পচানো শুরু করতে যাবে, তখনই ঘড়ির দিকে চোখ যায় অন্বেষার। সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে, “শৈলী, তুই ঘুমাতে যা। অনেক রাত হয়েছে। আম্মু দেখলে এই রাত-বিরাতে চিৎকার করতে শুরু করবে।”
“আরেকটু থাকি না।” বেচারী অনুনয় করে।
“না না, একদম না। এক মাস পর ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা। আর এখন চ্যাট করার ইচ্ছে জেগেছে।”
শৈলী আর কথা বলে না। মন খারাপ করে উঠে পড়ে। অন্বেষা ওর মন ভালো করার জন্যে বলে, “এই দেখ, আমিও কম্পিউটার বন্ধ করে দিচ্ছি।”
“তুই কম্পিউটার অন্য কারণে বন্ধ করছিস। তোর মোবাইলে কে জানি একটু আগে বারবার কল দিচ্ছিল। এখন তুই ঐটা ধরবি।”

অন্বেষা কম্পিউটার বন্ধ করতে করতে শৈলীর দিকে তাকিয়ে হাসে। ঘটনা সত্যি। একটা অননোন নাম্বার থেকে ফোন আসছিল। চ্যাটে ব্যস্ত থাকায় অন্বেষা লাইন কেটে দিচ্ছিল। জানা দরকার কে ফোন করছে। হয়তো হবে ওর কোন “চাহানেওয়ালা”। এই সব ছেলেদেরও সুক্ষ ভাবে অপমান করতে অন্বেষার মজা লাগে। কিন্তু তাদের চামড়া হয় গণ্ডারের চামড়ার মত। যতক্ষণ পর্যন্ত স্থূল অপমান না করা হবে, তারা সেটা বুঝবে না অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করবে।

ফোনটা আবার বাজতে শুরু করলো। অন্বেষা কলটা ধরে যেন একটু বিরক্ত হয়েছে এভাবে “হ্যালো” বলে।
“অন্বেষা বলছো?”
“কেন অন্বেষার গলা আপনি চেনেন না?”
ওপাশের মানুষটা হাসে, কিন্তু অপ্রস্তুত হয় না।
“না, অন্বেষার গলা আমি চিনি না। কারণ আজই আমি অন্বেষার সাথে প্রথম কথা বলছি?”
“রাত আড়াইটার সময় কাউকে ফোন করা যে ভদ্রলোকের আচরণ নয়, সেটা কি আপনাকে শেখানো হয় নি?”
“হ্যা, শেখানো হয়েছে। তবে আমি রাত আড়াইটায় ফোন করি নি। আমি করেছি বারোটার দিকে। আমার ফোন ধরা হয় নি।”
“একটা মানুষ ঘুমিয়েও থাকতে পারে।”
“হ্যা, পারে। তবে ঘুমন্ত মানুষ ফোন কেটে দিতে পারে না। তুমি ফোন কেটে দিচ্ছিলা। এ থেকে বোঝা যাচ্ছিল তুমি ঘুমাচ্ছিলে না। হয়তো ব্যস্ত ছিলে। তাই দেরি করে কল দিলাম আবার।”
এবার অন্বেষা সত্যি সত্যি রেগে যায়। নিজের যুক্তির উপর শক্তিশালী যুক্তি দেখলে অন্বেষার রাগ হয় খুব। তবে এটাও ঠিক এ ধরণের যুক্তিবাদী মানুষদের সে পছন্দও করে।
“আমার সাথে ডিবেট করা বন্ধ করেন। ঝেড়ে কাশেন। এত রাতে কেন ফোন দিয়েছেন সেটা বলেন। আমি ঘুমাতে যাবো।”
“আসলে আমি তোমাদের ক্যাম্পাসে তোমাকে দেখেছি গতকাল।”
“তো? NSU-এর ক্যাম্পাসে যে কেউ যেতে পারে এবং যে কাউকে দেখতেও পারে। তাতে সমস্যাটা কোথায়?”
“আসলে সমস্যাটা জটিল। তোমাকে দেখে আমার ভালো লেগেছে।”
অন্বেষা মনে মনে হাসে। একে সুক্ষ অপমানের সময় চলে এসেছে।
“মাইক্রোসফ্ট এক্সেল চেনেন?”
অন্য পাশের মানুষটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়, “হ্যা, চিনি। কিন্তু আমার কথার সাথে ওটার সম্পর্ক কোথায়?”
“আমাকে যাদের ভালো লাগে, তাদের নাম যদি একটা এক্সেল ফাইলে এন্ট্রি করা হয়, তাহলে অনেকক্ষণ ক্রোল ডাওন করার পর আপনার নামটা দেখতে পাবেন। কিছু বোঝা গেলো?”
অন্যদিক থেকে হাসির শব্দ আসছে। এটার চামড়াতো গণ্ডারের না, রীতিমত ডাইনোসরের। অন্বেষা হতাশ ভাবে আবার বলে,
“আমি এখন রাখলাম। আপনার হাসি শেষ হলে লাইন কেটে দিয়েন।”
এই বলে অন্বেষা ফোনটা পাশে রেখে সত্যি সত্যি শুয়ে পড়ে। প্রায় দশ মিনিট পর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওপাশের ছেলেটা তখনও লাইন কাটে নি। এটা কি একটা সুক্ষ অপমান? অনেকটা যেন “আমার হাসি এখনও শেষ হয় নি”। অন্বেষার মেজাজ চরম খারাপ হয় এবার। রাগে গজগজ করতে করতে লাইনটা কেটে ফোনটা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।

পরদিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসে অন্বেষা ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। সবাই লক্ষ্য করছিল অন্বেষা অন্য দিনের তুলনায় একটু চুপচাপ। অন্বেষার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী অরিন, পোরশি এবং লিজা বেশ কয়েকবার জানার চেষ্টা করেছে কী হয়েছে। অন্বেষা কিছু বলে নি। আসলে কী বলবে সেটাই অন্বেষা বুঝতে পারে না। কাল রাতের ছেলেটার ব্যবহার অন্বেষাকে তখনও খোঁচাচ্ছে।
ছেলেদের মধ্যে রাযি ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাই অন্বেষা রাযিকে আলাদা ভাবে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করে ওর ব্যবহার করা মোবাইল কোম্পানিতে পরিচিত কোন বড় ভাই আছে নাকি। রাযি বেশ অবাক হয়। তবে জানায় ওর পরিচিত এক বড় ভাই আছে যে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করে। অন্বেষা তখন রাযিকে গত রাতের ছেলেটার নাম্বারটা দিয়ে খোঁজ নিতে অনুরোধ করে। রাযি জানায় কতটুকু পারবে সে জানে না তবে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

এরপর কেটে যায় বেশ কিছু দিন। কোন ফোন আসে না। অন্বেষা মাঝে মাঝে নাম্বারটার দিকে তাকাতো। কল করার ইচ্ছেও জাগতো। কিন্তু সাথে সাথে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিতো। অন্বেষা এমন “আননোন কল” অনেকের থেকে পায়। তবে এই ছেলেটাকে কেন যেন অন্যরকম লাগছে। কিন্তু কেন? অন্বেষা বোঝে না।

অন্বেষার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা প্রতিক্ষার অবসান হয় আট দিন পর। সেই নাম্বার থেকে আবার কল আসে।
“কেমন আছো অন্বেষা?”
লোকটার নির্লিপ্ততায় অন্বেষা অবাক না হয়ে পারে না। খানিকটা মজা আর খানিকটা প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে অন্বেষা না চেনার ভান করে,
“কে বলছেন?” যেন চিনতেই পারে নি। এটা মানুষকে অপমান করার অন্বেষার আরেকটা হাতিয়ার। একজন পরিচিতকে ফোন করার পর যদি দেখা যায় অন্য দিকের সেই মানুষটা চিনতেই পারছে না, তাহলে সেটা যে কত বড় অপমান সেটা যে এর ভেতর দিয়ে যায় নি কোন দিন সে বুঝবে না। তার উপর অন্বেষা রাতের কলারদের নাম্বার সেইভ করে রাখে না। এতে ওকে অভিনয় করতে হয় না, অপমান অপনাআপনি করা হয়।
“আমাকে চিনতে পারো নি?” মানুষটা হতাশ হয়। তার গলার হতাশায় অন্বেষা আরো মজা পায়। মনে মনে বলে, “দ্যাখ ব্যাটা এখন কেমন লাগে”।
“না চিনতে পারি নি। কেন আপনি কি বিশেষ কেউ নাকি যে আপনাকে চিনতেই হবে? এ্যামেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রতিনিধি? আমাকে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সাথে ব্রেকফাস্টের জন্যে আমন্ত্রণ জানাতে ফোন দিয়েছেন?” মনে মনে অন্বেষা হেসে খুন হচ্ছিল তখন।
“আমি সায়েম।”
ছেলেটা এই প্রথম নাম বলল। গতদিন সে নাম বলে নি। তাই এখানেও একটু ভাব নেয়ার সুযোগ পেলো অন্বেষা।
“আপনি সায়েম, তো আমি কী করবো? এমন ভাবে বলছেন যেন বন্ড, জেমস বন্ড।”
“আমি তোমার সাথে কয়েকদিন আগে কথা বলেছিলাম।”
“ওহ, আচ্ছা।” যেন হঠাৎ মনে পড়েছে অন্বেষার এভাবে বলে, “আপনিই সেই লোক। সেদিনতো নাম-ঠিকানা কিছু বলেন নি। আর তাছাড়া আপনি ওভাবে ফোন না কেটে বসে ছিলেন কেন? টাকা কি বেশী হয়ে গেছে? সাত টাকা প্রতি মিনিটে কল রেইট।”
এবার সায়েম অবাক হয়, “আমি ফোন না কেটে বসে ছিলাম কখন? তুমি বললা হাসি শেষ হলে ফোন রেখে দিতে। তাই আমি ফোন রেখে কাজে চলে যাই।”
“আপনি জানতেন না যে আপনি ফোন কাটেন নি?”
“নাহ! এখন তোমার কাছে শুনলাম।”
এবার অন্বেষার মেজাজ নিজের উপর খারাপ হয়। এই ছেলেকে এমনি এমনি বেশী স্মার্ট ভেবেছে। আসলে সে জানেই না ঘটনাটা। অথচ এই ঘটনা নিয়ে অন্বেষার মনে কত তোলপাড়, কত অপমানের যন্ত্রণা।
সায়েম আবার অন্য প্রান্ত থেকে বলে, “কী হলো? চুপ করে আছো যে?”
“না, কিছু না। এত দিন পর কী মনে করে আবার ফোন করলেন?”
“কেন ফোন করেছি সেটাতো আগেই বলেছি। আমার তোমাকে ভালো লেগেছে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
“যাকেই ভালো লাগে, তাকেই এই কথা বলেন?”
“তুমি যেমনটা ভাবছো আমি সেরকম ছেলে না। আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চাই না। আমি চাই বিয়ে করতে। তুমি যদি চাও আমি ফর্মালি যোগাযোগ করতে পারি।”
এবার অন্বেষা একটু অবাক হয়। ছেলেটার গলার স্বর বেশ সিরিয়াস শোনায়। কেন যেন মনে হয় না এই ছেলে টাইমপাস করতে ফোন করেছে। অন্বেষা একটু খোঁজ নেয়ার জন্যে বলে,
“আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?”
“সেটা আপাতত বলা যাবে না।”
“কেন?”
“কারণ আছে।”
“সেই কারণটাই শুনতে চাই।”
“সেটাও বলা যাবে না।”
অন্য সময় হলে অন্বেষা রেগে যেতো। তবে আজকে রাগ করলো না।
“আপনি কী করেন?”
“কলা। কলা আমার নেশা এবং পেশা। আমি শিল্পী মানুষ। শিল্পকর্ম বানানো শিখছি। পরে সেটা বেঁচে পেট চালাবো।”
“ছবি আঁকেন?”
“ছবি আঁকা, ভাস্কর্য – সবই করি।”
অন্বেষা মনে মনে হাসে। লোকটা ঠিক কিসের উপর ভিত্তি করে ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছে সেটা সে বুঝতে পারছে না।
“আপনার কি ধারণা আপনি ছবি এঁকে আমার মত একটা স্মার্ট মেয়েকে চালাতে পারবেন?”
“তুমি যদি সত্যি স্মার্ট হতে তাহলে এই প্রশ্নটা করতে না। আমরা একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করেছি। বর্তমান যুগের একটা স্মার্ট মেয়ে কিন্তু নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে। তুমি এটা প্রশ্ন করতে পারতে যে আমরা সমান আয় করবো কিনা। কিন্তু আমি আয় করে তোমাকে চালাবো, এটা একটু বেশী ব্যাকডেটেড ধারণা হয়ে গেলো না?”
এবার অন্বেষা লজ্জা পেয়ে যায়। ছেলেটার মধ্যে একটা কিছু আছে যা ওকে আকর্ষণ করতে শুরু করেছে। ছেলেটা কিছুকিছু ক্ষেত্রে বোকা, কিছুকিছু ক্ষেত্রে উদাসীন কিন্তু যুক্তির ক্ষেত্রে বেশ পরিপক্ব। আন্বেষা দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার বলে,
“আয়ের বিষয়টা বাদই দিলাম। স্ট্যাটাসের বিষয়টা? ধরুন আমি পাশ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এক্সিকিউটিভ হলাম। আর আপনি হলেন চিত্রশিল্পী। তখন কি স্ট্যাটাসের কারণে আমাদের কোন সমস্যা হবে না?”
“সেটা কেন হবে? যদি আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি, তাহলে এটা কোন সমস্যাই নয়।”
অন্বেষা হাসে। বলে, “আপনি একটা ভিন্ন জগৎ-এ বাস করেন। একটা বাস্তব বহির্ভূত জগৎ। আমাকে আপনার ভালো লেগেছে, সে জন্যে আমি খুশি। তবে আপনাকে আঘাত না দিয়েই এটা বলতে চাই, আপনার ভালো লাগাটা ভুল জায়গায় হয়েছে। আপনি আপনার চারপাশ থেকেই ভালো লাগার মানুষ খুঁজে নিন।”
“এ কথা কেন বলছো? আমরা চেষ্টা করেতো দেখতে পারি।”
এবার অন্বেষার বিরক্ত লাগে। বাচ্চাদের খেলনা চাওয়ার মত এভাবে ভালোবাসা চাওয়াটা খুব বেশী “ইমম্যাচিউর” ব্যবহার। এর সাথে কথা বলাই বৃথা। তাই অন্বেষা ফোন রেখে দেয়ার জন্যে বলে,
“আমার কাল সকালে ক্লাস আছে। আমি এখন রাখি।”
“এড়িয়ে যাচ্ছো?”
“না বাবা। সত্যি আমার কাল সকালে ক্লাস আছে। বিশ্বাস করুন।”
“তোমাকে আমি অবিশ্বাস করছি না। সত্যি তোমার কাল সকালে ক্লাস আছে। তোমার প্রিয় JK স্যারের ক্লাস। FIN 440, কর্পোরেট ফিন্যান্স। স্টার টাওয়ারের ১১১৪ নাম্বার রুমে। অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।”
কয়েক সেকেন্ড অন্বেষা নিশ্বাস বন্ধ করে ফোনটা ধরে থাকে। তারপর বলে, “সত্যি করে বলেন তো আপনি কে?”
“সেটা আমরা অন্য কোন দিন আলোচনা করবো। কাল সকালে তোমার ক্লাস। এখন ঘুমাও।”
অন্বেষা কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। ওকে থামিয়ে দিয়ে আবার ঘুমাতে বলে ওপাশ থেকে সায়েম ফোন রেখে দেয়। অন্বেষা দ্রুত সায়েমকে কলব্যাক করে কিন্তু ততক্ষণে সায়েম তার ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।

সে রাতে অন্বেষা অনেক্ষণ জেগে ছিল আর ভাবছিল, সায়েম ছেলেটা এমন যে যখনই তার উপর অন্বেষার আগ্রহটা কমে যায়, ঠিক তখনই আবার কেমন করে যেন আগ্রহটা ব্যাপক ভাবে ফিরিয়ে আনে। এটা হতে পারে মোহ কিম্বা না জানাকে জানার তাড়ণা, তবে আগ্রহ ছেলেটা সফল ভাবে এবং বেশ পাকাপোক্ত ভাবে অন্বেষার মধ্যে তৈরি করে নিচ্ছে, সেটা বুঝতে ওর সমস্যা হয় না। তবে এটা বুঝতে পারে না যে এই আগ্রহটা কি অন্বেষার জন্যে ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ।


লেখক – নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

Website : http://www.niaz.co.uk/

 

অন্বেষা -১ নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী

অন্বেষা – ২য় পর্ব নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী

অন্বেষা – ৩য় পর্ব – নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী