আগৈলঝাড়ায় সরকারি প্রকল্পে লুটপাটের সত্যতা মিলেছে

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ আগৈলঝাড়ায় গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণা বেক্ষণ খাতে অনিয়মের অভিযোগে তদন্তর নামে লোক দেখানো তদন্ত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। যাদের সহযোগিতায় লুটপাট করা হয়েছে তারাই নিযুক্ত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আই ওয়াশের এ তদন্ত কমিটি  শুরুতেই সচেতন মহলের প্রশ্নবানে জর্জরিত হলেও দায় সেরেছে ইউএনও।
 
আগৈলঝাড়ায় একাধিক অস্তিত্বহীন প্রকল্প ও প্রায় ২ কোটি টাকার বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে এমপি’র কোটার বরাদ্দ! প্রকল্পের অর্থ আতœসাতের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস গত ৭ আগষ্ট উনিঅ/আগৈল/বরি/২৭০ স্মারকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শচীন্দ্র নাথ বৈদ্যকে ১০ আগষ্টের মধ্যে  সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

প্রকাশ, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরিশাল-১ আসনের এমপি এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে আগৈলঝাড়ায় প্রথম কিস্তিতে ১২১ টি প্রকল্পের অনুকুলে ১৫ মে তার ডিও লেটারের মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা বন্টন করেন। দ্বিতীয় কিস্তিতে ১৯ জুন ৩৬ টি প্রকল্পের অনুকুলে ১৩ লাখ টাকা অনুরুপ বন্টন করেন। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি এমপির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভূয়া প্রকল্প এবং প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ করিয়ে আতœসাৎ করার মহা উৎসব করেছেন দলীয় এক শ্রেনীর সুবিধা ভোগি নেতারা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শচীন্দ্র নাথ বৈদ্য অতি বৃষ্টি জনিত কারণে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ দেখিয়ে গত ১৮ আগষ্ট ৩৪৬ নং স্মারকে ৫ কলামের মাধ্যমে ৮ টি প্রকল্পের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন,
এমপি’র ২য় কিস্তির ৩৬ নং প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকার বাগধা মডেল স্কুল সংস্কার অগ্রগতি দেখানো হয়েছে শতভাগ, তবে মডেল স্কুলের মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে তদন্তে বলা হলেও অফিসে মাষ্টার রোল জমা পাননি। ওই ভূয়া প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ করে অন্য একটি প্রকল্পে কিভাবে কাজ হয় তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন পিআইও অফিস সহ সচেতন জনগন।  ওই প্রকল্পের সিপিসি ছিলেন ওই স্কুল কমিটির প্রাথমিক পর্যায়ের মনোনিত সভাপতি ও স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ. হামিদ খাঁন।

৩০ হাজার টাকা বরাদ্দে বাগধা বাজার পোষ্ট অফিস সংস্কারের জন্য দেয়া হলেও সিপিসি ওই টাকা দিয়ে পোষ্ট অফিসের জমি রেজিষ্ট্রি করেছেন এমন কথা তদন্তে উল্লেখ করলেও মাষ্টার রোল জমা পাওয়া যায়নি বলে জানান। এখানেও দেখানো হয়েছে তদন্তের নামে আই ওয়াশের নতুন তত্ত। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি  এখানেও কোন উন্নয়ন কাজ করেনি বলে ওই পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাষ্টার চাঁন মিয়া জানান। তিনি অভিযোগে বলেন, তাকে বাদ দিয়েই প্রকল্প কমিটি করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে অফিসের দৈনন্দিন কাজ করছেন। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিপিসি ছিলেন ওই ক্ষমতাধর ওই নেতা হামিদ খাঁনের ছেলে আমিনুল ইসলাম, সেক্রেটারী ছিলেন তার মেয়ে জামাতা আকবর হোসেন মিয়া, সদস্য ছিলেন তার অপর ছেলে রফিকুল ইসলাম তরুন।

পূর্ব বাগধা প্রগতি যুব সংঘ উন্নয়নের নামে ৩৯ নং ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে আতœসাৎ করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ওই প্রকল্পের সিপিসি হয়েছেন হামিদ মাষ্টারের ছেলে আমিনুল ইসলাম। এই উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি কলামে কোন কিছুই উল্লেখ  করেননি পিআইও শচিন। মন্তব্যর কলামে শুধু মাষ্টার রোল পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বাগধা ইউনিয়নের দক্ষিন চাদ ত্রিশিরা হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদ উন্নয়ন (প্রকল্প নং-২৮) এর সিপিসি কামরুল হাসান বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে কোন কাজই করেননি বলে স্থানীয় মুসল্ল¬ীরা জানান। অজ্ঞাত কারনে ওই উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রগতি সম্পর্কে কোন মন্তব্যই  পিআইও তার তদন্তে করেননি। একই ডিও লেটারের ৩৪ নং প্রকল্প বাগধা দাসপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও তদন্তে অজ্ঞাত কারনে ওই প্রকল্পই অর্ন্তভূক্ত করেননি পিআইও শচিন। ওই প্রকল্পেরও সিপিসি ছিলেন ক্ষমতাধর মাষ্টার হামিদ খাঁন। একই ইউনিয়নের ৪২ নং প্রকল্পে চাঁদত্রিশিরা খাদিজাতুন কুরা মহিলা মাদ্রাসার নামে ৫০ হাজার টাকা সিপিসি হিসেবে গ্রহন করেন উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পেয়ারা ফারুক বকতিয়ার। ওই মাদ্রাসার কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি এমন সংবাদ প্রকাশ ও নোটিশের পর সেখানে মাটি কাটার কিছু কাজ করা হয়েছে। এখানে দেখানো হয়েছে উন্নয়ন ও অগ্রগতি শতভাগ। এমপির বরাদ্দকৃত ৩৭ নং প্রকল্পে আগৈলঝাড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি উন্নয়ন প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা। ওই টাকার আগৈলঝাড়া প্রাথমিক শিকক্ষক সমিতি উন্নয়ন অগ্রগতি শতভাগ দেখালেও আগে কাজ না করায় নোটিশ দেয়ার পর সমিতির অসমাপ্ত ঘরের ভিটিতে কিছু বালু দেয়া হয়, তবে মাষ্টার রোল পিআইও পাননি বলে জানান। ওই প্রকল্পের সিপিসি হন শিক্ষক সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন বাবুল সেরনিয়াবাত।

এমপির প্রথম কিস্তির বরাদ্দ থেকে রাজিহার ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র বালার বাড়ির সার্বজনীন গোবিন্দ মন্দির সংস্কার বাবদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যার প্রকল্প নং ৪৯। সিপিসিও হন ওই নেতা নিজেই। অথচ ওই বাড়িতে সার্বজনিন মন্দির তো দূরের কথা কোন মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে ওই প্রকল্পের মুল্যায়নে দেখানো হয়েছে শতভাগ অগ্রগতি। রতœপুর ইউনিয়নের দত্তেরাবাদ হাজি বাড়ি জামে মসজিদ সংস্কার বাবদ বরাদ্দকৃত ৩০ হাজার টাকা প্রকল্পের সিপিসি হারুন হাওলাদার উঠিয়ে নিলেও কোন কাজই করা হয়নি এই প্রকল্পে। অথচ পিইওর তদন্তে ওই প্রকল্পের সংস্কার অগ্রগতি শতভাগ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও একাধিক ভুয়া প্রকল্পের অস্তিত্ব উপজেলা সদরে থাকলেও পিআইও তার তদন্তে এড়িয়ে যান। এর মধ্যে পুকুর চুরি করা প্রকল্প হল; ডরমিটরি থেকে ডাকবাংলো পর্যন্ত ড্রেন সংস্কার। এমন আরও কমপক্ষে ১০ টি ভুয়া প্রকল্প রযেছে।

সার্বিক মন্তব্যে শচিন বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা পূর্বক সরকারী বিধি মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে।  ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে টিআর কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজের যে স্মস্ত প্রকল্পের মাষ্টার রোল যথা সময়ে মাষ্টার রোল জমা না দেয়ায় প্রকল্প চেয়ারম্যানদের ইতোপূবেই চিঠির মাধ্যমে তাগিদ দেয়া হয়েছে।